সহজ গ্রামীণ মিশন
কৃষি ক্ষেত্র, বাগান পরিচর্যা, কুটির শিল্প এবং পশুপালনে ঐশ্বরিক শক্তি থেকে উৎপন্ন চৈতন্য লহরীর প্রভাব সম্পর্কে জানুন ।
সহজ যোগ কি ?
সহজ যোগ একপ্রকার ধ্যানের পদ্ধতি, যা শ্রী মাতাজী নির্মলা দেবী ১৯৭০ সালে মানব জাতির কল্যাণের জন্য সূচনা করেছিলেন। সহজ যোগে কুণ্ডলিনী জাগরণের মাধ্যমে চিন্তাশূন্য স্থিতি লাভ হয়, এবং মানসিক শান্তির দ্বারা নিজেকে জানার ও আত্ম উপলব্ধি করার সুযোগ পায়।
শ্রী মাতাজি নির্মলা দেবী দ্বারা সৃষ্ট সহজ যোগ মানব জাতির শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উত্থানের ক্ষেত্রে লাভদায়ক । সহজ যোগ ধ্যান অভ্যাসের সময় কোন ব্যক্তি পরমাত্মার সর্বব্যাপী প্রেম শক্তিকে শীতল চৈতন্য লহরী রূপে মাথায় এবং হাতের তালুতে অনুভব করতে পারে। এটি একটি শান্তি এবং আনন্দ প্রদানকারী অবস্থা । বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানও এই বিষয়ে মান্যতা দিয়েছে যে সহজ যোগ ধ্যান মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। এই ধ্যান বহু জটিল রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করে। এটি আমাদের সার্বিক উন্নতিতে সাহায্য করে।
সহজ যোগের অর্থ কি ? যদি আমরা বিস্তারিত ভাবে বলি, তাহলে বলতে হয় যে “সহ” অর্থাৎ সঙ্গে আর “জ” অর্থাৎ জাত। এককথায় সহজাত অর্থাৎ যা নিজের সাথেই আছে।
“যোগ” অর্থাৎ ঈশ্বরের সর্বব্যাপী প্রেমশক্তির সঙ্গে নিজের সংযুক্তিকরণ । সহজ যোগ ধ্যান প্রক্রিয়া নিত্য অভ্যাসের ফলে মানব জাতির জীবনে ঈশ্বরের করুণা বর্ষিত হয় । এছাড়াও মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বিকশিত হয় জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। প্রত্যেক মানুষের শরীরে জন্ম থেকেই এক সূক্ষ্ম তন্ত্র থাকে । সেই সূক্ষ্ম তন্ত্রে তিনটি নাড়ী ও সাতটি চক্র এবং পরমাত্মার শক্তি বিদ্যমান। পরমাত্মার এই শক্তি কুণ্ডলিনী শক্তি নামে পরিচিত। এই শক্তি আমাদের শরীরের শিরদাঁড়ার নীচে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে।
শ্রী মাতাজী নির্মলা দেবীর শেখানো সহজ যোগের মাধ্যমে কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ সহজেই হয়ে যায় এবং মানুষের যোগ প্রাপ্তি হয়।
এই যোগ অর্থাৎ সহজ যোগ পরমাত্মার সর্বব্যাপী প্রেমশক্তির সঙ্গে যুক্ত হবার অত্যন্ত সরল পথ।
শ্রী গুরু নানক, সন্ত জ্ঞানেশ্বর প্রভৃতি মহান পণ্ডিতদের বাণী গুলিতে সহজ যোগের উল্লেখ রয়েছে। সহজ যোগের সাহায্যে অনেক দুরারোগ্য রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই কারণে দেহ সমস্ত ধরণের মানসিক, শারীরিক এবং আবেগ সংক্রান্ত অসুবিধা থেকে মুক্তি পায়। এটি আধ্যাত্মিক উত্থানের জন্য অত্যন্ত সহজ এক ধ্যান পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিটি শিখলে প্রতিটি মানুষ তার প্রতিটি কাজ এবং জীবনকে সফল করে তুলতে পারে। এটি অহেতুক উত্তেজনার থেকে মুক্তি দেয় । এর অনুশীলনকারী ব্যক্তি সারা দিন ধরে শক্তিতে ভরপুর থাকে।
আত্মসাক্ষাৎকার লাভের পর কৃষি ক্ষেত্রে সহজ কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগ –
১. প্রথমে আত্মসাক্ষাৎকার – কৃষক বা ইচ্ছুক ব্যক্তি যাদের সহজ কৃষি করার ইচ্ছা আছে তাদেরকে প্রথমে আত্মসাক্ষাৎকার নিতে হবে। এটাই সহজ যোগ ধ্যান পদ্ধতির প্রথম ধাপ। আত্মসাক্ষাৎকার অনুভব করতে চাইলে তাদেরকে নিকটস্থ কোন ধ্যান কেন্দ্রে যেতে হবে অথবা কোন ব্যক্তি যে সহজ যোগ ধ্যানের সাথে জড়িত তার কাছে যেতে হবে।
২. সহজ যোগ ধ্যান পদ্ধতি ভালো ভাবে শিখতে হলে ধ্যান করা খুবই দরকার, কারণ আত্মসাক্ষাৎকার গ্রহণ করার পরে আমাদের শরীরের সূক্ষ্ম তন্ত্র কে মজবুত করা দরকার।
সহজ যোগে আত্মসাক্ষাৎকারের পর ধ্যানের স্থিতি তৈরী হয় তখন যোগী নিজের মাথার তালু ভাগে এবং হাতের তালুতে চৈতন্যলহরী অর্থাৎ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভব করে, এটি এমন এক অবস্থা যাতে দীর্ঘক্ষণ থেকে যেতে ইচ্ছা করে ।
এই শক্তি অর্থাৎ ঈশ্বরের থেকে প্রাপ্ত ঠাণ্ডা অনুভূতি সহজ কৃষকেরা নিজেদের কৃষি কার্যে লাগাতে পারে। সহজ কৃষকগণ ও ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ যে মাধ্যম দ্বারা সহজ যোগ গ্রহণ করেছেন ; সেখান থেকে সহজ যোগ ধ্যানের পদ্ধতি ও সহজ কৃষির কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সহজ যোগ কৃষি ক্ষেত্রেও আর্শীবাদ স্বরূপ
“……………… কৃষি ক্ষেত্রে আমরা প্রচুর গবেষণা করেছি । একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ আত্ম সাক্ষাৎকার পাবার পর চৈতন্য লহরীর উপর অনেক গবেষণা করেছেন। তিনি এটা দেখেছেন যে যদি তোমরা জলকে চৈতন্বিত কর এবং সেই জল গাছে দাও, তবে তোমরা দশ গুণ পর্যন্তও বেশি ফলন পেতে পারো। এই গবেষণাটি রাহুরি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (মহারাষ্ট্র ) -এ করা হয়েছিল। তাঁহারা দেখেছেন যে সাধারণ ভাবে বেড়ে ওঠা একটি গাছ এবং চৈতন্বিত জলের সাহায্যে বেড়ে ওঠা একটি গাছের মধ্যে আশ্চর্যজনক পার্থক্য রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে আর একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে, যদি তোমরা চৈতন্য দাও ; তবে একটা সাধারণ গরুও অনেক বেশি দুধ দিতে পারে।
সুতরাং, এটা ভারতবর্ষের কৃষিক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। সরকার আমাদের ইজারা হিসাবে অনেকখানি জমি বরাদ্দ করেছে ; যেখানে আমরা পরীক্ষা করে দেখাতে চলেছি কীভাবে আমরা পরম চৈতন্যকে ব্যবহার করতে পারি। কিছু সহজ যোগী কৃষক একটা ভালো কাজ করেছেন। তাঁহারা পশু এবং খামার উৎপাদনে পরম চৈতন্যের সুফল দেখিয়েছেন। “
পরম পূজ্যা শ্রী মাতাজী নির্মলা দেবী
( তথ্য সূত্র: নির্মল সুরভী পৃ. ন. ২৩৬)
Bengali-Krishi-booklet